বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন।
জোট না হলেও সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, বাজেটে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়া হলেও কোভিডে দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে যাওয়া জনগোষ্ঠী ও কাজ হারানো মানুষের জন্য কোনো প্রণোদনা নেই। সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বিএনপি গণতন্ত্র হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যেরও জবাব দেন মির্জা ফখরুল। ক্ষমতাসীনরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার কোভিডকে নিয়ে ব্যবসা করতে চায়। এই কোভিডকে নিয়ে তারা প্রথম থেকেই ব্যবসা শুরু করেছে। প্রায় ৭০০ কোটি টাকা অগ্রিম দিয়ে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা আনার কথা। কিন্তু এখনো দেড় কোটি টিকাও পায়নি।
রাশিয়া ও চীনের টিকার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, দেখুন কী রকম কাজ করছে। কিছু জন্তু আছে পানি খায় ঘোলা করে। চীন যখন এসে বলল যে, আমার সঙ্গে চুক্তি করো, তারা (সরকার) করল না। রাশিয়া এসে বলল যে, আমি দেব, চুক্তি করো। করল না। এখন চীন আর রাশিয়ার কাছে গিয়ে ধরনা দিচ্ছে। চীন বলছে, মিথ্যা কথা বলেন কেন? আপনাদের সঙ্গে তো কোনো চুক্তিই হয়নি। এটাকে কী বলবেন?
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি সফল হয়েছেন এই দেশ থেকে স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে। এটা সফলতা। সেই জন্য এই সরকার জানে বেগম জিয়া হচ্ছেন সেই হ্যামিলনের বংশীবাদক যিনি বাইরে বেরুলে বাঁশি বাজাতে শুরু করবেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে। দ্যাটস দ্য রিয়েলিটি। এজন্য তাঁকে তারা সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছে, এখনো তিনি গৃহবন্দি।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, স্বাস্থ্যবিধির কথা বলে জনগণের আন্দোলন সরকার বন্ধ রেখেছে। কোভিড ব্লেসিং ফর শেখ হাসিনা, কোভিড শেখ হাসিনাকে আশীর্বাদ দিচ্ছে। এই কোভিড দেখাইয়া তারা নানা অপকর্ম করছে। জনগণকে হয়রানি করছে। আজকে স্বাস্থ্যবিধির কথা বলে জনগণের আন্দোলন, প্রোগ্রাম, মিটিং-মিছিল সব কিছু বন্ধ রেখেছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আপনাদের ভাববার কোনো কারণ নেই যে, করোনার স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে জনগণকে বাঁচানোর জন্য সরকার এই লকডাউন দিচ্ছে, এই বিধিনিষেধ দিচ্ছে। লকডাউন দিচ্ছে, সব কিছু তো চলছে, কোনো কিছু তো বন্ধ নেই, সব কিছু খোলা।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, পাকিস্তান আমলে এই প্রেস ক্লাবে আইয়ুব (আইয়ুব খান) কারফিউ জারি করেছিল। তখন একটা কুকুর রাস্তা পার হইতেছে। প্রেস ক্লাব থেকে একজন ফটোগ্রাফার জুম লেন্স দিয়ে ছবি তুলেছিলেন। পরের দিন পত্রিকায় সেই ছবি ছাপা হয়েছিল। যার ক্যাপশন ছিল-‘আইয়ুব তোমার কারফিউ কুত্তায়ও মানে না’। সেই কারণে প্রেস ক্লাবে সেদিন হামলাও হয়নি, ওই সাংবাদিকের জেলও হয় নাই।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতারা।
Leave a Reply