স্টাফ রিপোর্টার:
দেশের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের বাজার নরসিংদীর শেখেরচরের বাবুরহাটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়ে গেল অর্ধশতাধিক দোকান। ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সোয়া ২ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।
শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সভাপতি ও শীলমান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মো: গিয়াস উদ্দিন জানান, গতকাল রোববার (২৯ অক্টোবর) দিবাগত রাত সোয়া ১১টার দিকে বাবুর হাটের বণিক সমিতির পুরাতন অফিস সংলগ্ন গলি থেকে এ আগুনটা শুরু হয়।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাজারের প্রায় ১০০ টি দেশীয় কাপড়ের দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাজারের বৈদ্যুতিক খুঁটির ল্যাম্পপোস্ট থেকে শর্টসার্কিট হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তিনি।
বাজারের ব্যবসায়ী, বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ জানান, সপ্তাহের তিনদিন চলে পাইকারি বেচাকেনা। বাজারে ছোট বড় প্রায় তিন হাজারের মতো দোকান রয়েছে এই হাটে। গতকাল রোববার রাত সোয়া ১১টার দিকে হঠাৎ বণিক সমিতির পুরাতন অফিসের গলিতে আগুনের ধোঁয়া দেখতে পায় এলাকাবাসী। মুহূর্তের মধ্যেই আগুনের লেলিহাল শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর মুহূর্তেই বাজারের গলির ভেতরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ আগুন ও লেলিহান শিখা দেখে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে দোকান মালিকদের লোকজন মালামাল সরানোর চেষ্টার পাশাপাশি আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী আগুনের ভয়াবহ রুপ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মালামালসহ সমস্ত দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী সর্বশান্ত হবেন বলে জানান।
আগুনের খবর পেয়ে মাধবদী ও নরসিংদীসহ আশেপাশের ফায়ার স্টেশনের প্রায় ১১টি দমকল বাহিনী আগুন নেভানোর কাজ করেন। বাজারের গলিতে প্রবেশের জন্য কালভার্ট ভাঙ্গা থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি। পরে তারা রিজার্ভ ট্যাংকির পানি ও পাশের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি অগ্নিকাণ্ডে শাড়ি, লুঙ্গী, থ্রিপিস, থান কাপড়সহ দেশীয় কাপড়ের শতাধিক দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এসব দোকান থেকে কোন কাপড় সরানো সম্ভব হয়নি বলে জানান তারা। এ অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম এবং পুলিশ সুপার মো: মোস্তাফিজুর রহমানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাবুরহাট বণিক সমিতির সভাপতি ও শীলমান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মো: গিয়াস উদ্দিন জানান, আগুন দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। কালভার্ট ভাঙার থাকার কারণ তারা গাড়ি নিয়ে বাজারের গলিতে প্রবেশ করতে পারেনি। এতে কমবেশি বাজারের ১০০ টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে। তদন্তের পর ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে।
ঢাকা থেকে আসা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সহকারী পরিচালক মো: আনোয়ারুল হক জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ব্রিজ ভাঙার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে না পেরে পাশে রেখেই কাজ করতে হয়েছে। পাশের খালের পানিতে পাম্প স্থাপন করে একে একে মোট ১১টি ইউনিট ৩ ঘণ্টা চেষ্টার ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। বাজারের প্রায় বেশিরভাগ দোকানঘর ঢেউটিনের ঘর হওয়ায় পানি দেয়ায় ভেতরে পানি ঢুকতে সমস্যা হয়েছিল, এজন্য টিন ভেঙে পানি দিতে হয়েছে। আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বলা সম্ভব হয়নি। তদন্তের পর এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বিস্তারিত বলা হবে।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আগুনের খবর পেয়ে বাজারের দোকানের মালামাল চুরি ও লুটপাটের বিষয়টি প্রতিরোধে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করে। আগুন লাগার সময় একটি চক্র থাকে যারা লুটপাটের চেষ্টা করে, এমনটা যাতে না হয়, তার জন্য প্রায় ৭০ জন ডিবি পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা যানজট ও ভিড় এড়াতে দায়িত্ব পালন করে।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম জানান, বাবুর হাট দেশের জন্য একটি বড় বাজার, ফায়ার সার্ভিসসহ সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন। আগুনের ঘটনার কারণ জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চিত্রা শিকারীকে প্রধান করে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বণিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্টদের সদস্য করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রনয়নের মাধ্যমে সরকারিভাবে সহায়তারও চেষ্টা করা হবে।