টাইমড আউটে’র ম্যাচ জিতে টিকে রইল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আশা
- আপডেট সময় : ১২:০৭:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০২৩
- / ১০১৮ বার পড়া হয়েছে
অনলাইন নিউজ ডেস্ক
‘এল ক্লাসিকো’ নাকি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই? বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে নজর রাখলে এমন জিজ্ঞাসা মনের কোণে উঁকি দিতেই পারে। গত কয়েক বছর ধরে দুই দলের মাঠের লড়াই অনেকটা এমন দ্বৈরথেই রূপ নিয়েছে। আজ যাতে ঘি ঢেলেছে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ‘টাইমড আউট’। জবাবে ম্যাচজুড়ে টাইগার ব্যাটারদের একের পর এক স্লেজিং করেন লঙ্কানরা। ক্ষেপে যাওয়া সাকিব আল হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্তও পেয়ে যান ফর্মে ফেরার রসদ। তাদের দুজনের ১৬৯ রানের জুটিতে ভর করে বাংলাদেশ ৩ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে।
উত্তেজনার পারদ চরমে পৌঁছানোর জন্য পুরো আয়োজন প্রস্তুত করেছিলেন সাকিব-ম্যাথিউসরা। যে ম্যাথিউসের সঙ্গে এতকিছু, তার বলেই উইকেট দিয়ে বিদায় নেন সেঞ্চুরির পথে থাকা সাকিব-শান্ত দুজনেই। তাদের বিদায়ের পর মুশফিকুর রহিম ও ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আউটে ম্যাচ আরও নাটকীয় হয়ে ওঠে। মনের গহীনে শঙ্কাও জেগে ওঠে বলে– এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার নিশ্চিত জয়ের ম্যাচ খুইয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু হতে দেননি তাওহীদ হৃদয়রা। ক্রিজে নামার পর তাকে উদ্দেশ্য করে চারিথ আসালাঙ্কাকে কিছু বলতে দেখা যায়।
তার আগে ম্যাচ জয়ের মূল ভিতটা গড়ে দিয়েছেন সাকিব ও শান্ত। ৪১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল টাইগাররা। সেখান থেকে টুর্নামেন্টজুড়ে রানের জন্য ভুগতে থাকা সাকিব-শান্ত মিলে কী স্বস্তির ইনিংসই না খেললেন! শান্ত করেছেন ৯০ আর ৮২ রান এসেছে সাকিবের ব্যাট থেকে। ৪১.১ ওভারেই লঙ্কানদের দেওয়া ২৮০ রানের লক্ষ্য পেরিয়েছে বাংলাদেশ।
এ জয়ে পয়েন্ট তালিকায় শ্রীলঙ্কাকে টপকে সাতে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সুযোগ পেতে হলে থাকতে হবে শীর্ষ আটের মধ্যে। দুই দলেরই বাকি একটি করে ম্যাচ। নেট রান রেটে শ্রীলঙ্কাকে টপকে যাওয়ার ব্যাপার ছিল, তাতে সফল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের পর ম্যাচজুড়ে আলোচনার বিষয় ছিল অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের টাইমড-আউট।
লঙ্কানদের রান তাড়া করতে গিয়ে প্রথম ওভারটা দেখেশুনেই খেলেছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। শেষ দুই বলে তানজিদ দুটি চার মারেন। দ্বিতীয় ওভারে এক চারের সঙ্গে আসে তিনটি সিঙ্গেল রান। ভালোই আগাচ্ছিল ইনিংস, এর মাঝেই পরের ওভারের প্রথম বলে দিলশান মাদুশঙ্কাকে মারতে গিয়ে ওপরে ক্যাচ তুলে দেন তামিম। টানা ব্যাট হাতে ব্যর্থ তামিম আজও ফিরেছেন ৫ বলে ৯ রান করে। এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানে ফিরেন লিটনও। ৬ রানের মাথায় তিনি জীবন পেয়েছিলেন। পরে কাসুন রাজিথার ওপর চড়াও হয়ে পরপর ২ বলে ২টি ছক্কা মারার পরই পায়ে টান পড়ে তার। বেশ খানিকটা সময় নিয়ে ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে মাদুশঙ্কার এক ইয়র্কারে এলবডব্লিউ হন লিটন। সাজঘরে ফেরার আগে তিনি ২৩ বলে ২২ রান করেন।
এবার সাকিবের সমর্থনে ভন-সাইমনের যুক্তি
সাকিব-ম্যাথিউসের মাঝে কী ঘটেছিল, জানালেন চতুর্থ আম্পায়ার
জুয়া প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব ফিরিয়েছেন বাবর-রিজওয়ান!
দুই ওপেনার ৪১ রানে ফিরলেও দলকে টেনে নিয়েছেন শান্ত ও সাকিব জুটি। যা শেষ পর্যন্ত ১৬৯ গিয়ে ঠেকে। দিল্লিতে শান্ত ও সাকিবের দারুণ ব্যাটিং দেখে সমর্থকদের আফসোস বরং বাড়তে পারে আরও! বড্ড দেরি হয়ে গেল যে। আসরজুড়ে রানখরায় ভুগেছে টাইগার ব্যাটাররা। দারুণ বোঝাপড়ায় তারা সেঞ্চুরির পথেই হাঁটছিলেন। ৩২তম ওভারে ম্যাথিউসের থেমে আসা বলে লিডিং-এজে মিড অফে আসালাঙ্কার হাতে ধরা পড়েন সাকিব। ১২ চার ও ২ ছক্কায় ৬৫ বলে ৮২ রানে টাইগার অধিনায়ক থামেন।
ব্যাক্তিগত ৮২ রানের মাথায় সাকিবকে ফেরানোর পর ৯০ রানের মাথায় সেই ম্যাথিউসেরই শিকার হলেন শান্ত। অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা মারতে গিয়ে ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে বোল্ড হন শান্ত। ১২ চারে ১০১ বলে তিনি খেলেছেন ৯০ রানের ইনিংস। তার বিদায়ে স্বস্তি উবে যায় বাংলাদেশের। পরপর উইকেট দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিক ১০ ও রিয়াদ করেন ২২ রান।
শেষদিকে নাটকীয়তা তৈরি হতে পারত আরও। তাওহীয় হৃদয় ক্রিজে আসতেই তাকে স্লেজিং করতে থাকেন আসালাঙ্কা। যার জবাব তিনি পরপর দুই ওভারে লং-অন ও মিড-অনে দুটি ছয় হাঁকিয়ে দেন। তার ৭ বলে ১৫ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যায়।
লঙ্কানদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন পেসার দিলশান মাদুশঙ্কা। এছাড়া দুটি করে শিকার করেন ম্যাথিউস ও মাহেশ থিকশানা।
এর আগে দিল্লিতে টস হেরে আগে আজ ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভার ৩ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৭৯ রান সংগ্রহ করেছে শ্রীলঙ্কা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০৮ রান করেছেন চারিথ আসালঙ্কা। বাংলাদেশের হয়ে ৩ উইকেট শিকার করেছেন তানজিম সাকিব। বল হাতে ইনিংস শুরু করেন শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি এই পেসার প্রথম ওভারেই সাকিবের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। ষষ্ঠ বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে পরে আরো বাইরে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় জায়গায় দাঁড়িয়ে শট খেলতে যান কুশল পেরেরা। ঠিকমতো টাইমিং না হওয়ায় ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল জমা পড়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মুশফিক। পেরেরা ফেরেন ৪ রান করে।
প্রথম ওভারেই উইকেট নিয়ে দুর্দান্ত শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর প্রথম পাওয়ার প্লেতে আর সফলতার দেখা পায়নি। ফলে ১০ ওভার শেষে এক উইকেট হারিয়ে ৫২ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। ১১তম ওভারে প্রথমবার স্পিন আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক নিজেই হাতে বল তুলে নেন। সাকিবের ওভারের তৃতীয় বলটি স্লটেই ছিল সেখানে এক পা এগিয়ে লং অনের ওপর দিয়ে উঠিয়ে মারতে যান কুশল মেন্ডিস। ঠিকমতো খেলতে না পারায় শরিফুলের হাতে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩০ বলে ১৯ রান।
আজকের ম্যাচের আগে বাংলাদেশের স্কোয়াডের ১৪ জনই ম্যাচ পেয়েছিলেন। বাকি ছিলেন কেবল তানজিম সাকিব। অবশেষে মুস্তাফিজের চোটে সুযোগ আসে তারও। খেলতে নেমে বল হাতে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেটের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তিনি। তবে সেটা মুশফিকের নাগালের বাইরে দিয়ে যায়। ফলে বিশ্বমঞ্চে উইকেটের স্বাদ নিতে অপেক্ষা বাড়ে তার। তবে সেটা খুব বেশি দীর্ঘ হয়নি। ১৩তম ওভারের চতুর্থ বলে ৪১ রান করা নিশাঙ্কাকে বোল্ড করেছেন ডানহাতি এই পেসার।
দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে দারুণ ব্যাটিং করছিলেন চারিথ আসালঙ্কা-সাদিরা সামারাবিক্রমা।তাদের পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটিতে লড়াই জমিয়ে তুলছিল শ্রীলঙ্কা। ৪১ রান করা সামারাবিক্রমাকে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন সাকিব।
সামারাবিক্রমা সাজঘরে ফেরার পর উইকেটে আসেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। তিনি যে হেলমেট নিয়ে উইকেটে আসেন সেটিতে নিরাপদ বোধ করছিলেন না। তাই বল খেলার আগেই নতুন আরেকটি হেলমেট নিয়ে আসা হয়। সেটিতেও খানিকটা সমস্যা ছিল। তাই আবারো হেলমেট পরিবর্তন করতে চান ম্যাথিউস। কিন্তু ততক্ষণে ২ মিনিট পার হয়ে যায়। তাতে টাইমড আউটের আবেদন করেন সাকিব। আর তাতে নিয়ম অনুযায়ী আউট দেন আম্পায়ার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই প্রথমবার ঘটল এমন ঘটনা। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে এর আগে ৬ বার টাইমড আউট হয়েছেন ব্যাটাররা।
বিশ্বকাপের প্লেয়িং কন্ডিশন অনুযায়ী—কোনো ব্যাটার আউট হওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে নতুন ব্যাটারকে বল খেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তবে এমসিসির নিয়ম অনুযায়ী—ওয়ানডেতে কোনো ব্যাটার আউট হওয়ার ৩ মিনিটের মধ্যে নতুন ব্যাটারকে বল খেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যেহেতু এই ম্যাচটি বিশ্বকাপের অংশ, তাই এখানে বিশ্বকাপের প্লেয়িং কন্ডিশনই কার্যকর হয়েছে।
ম্যাথিউসের বিতর্কিত আউটের পর বড় জুটির পথে ছিলেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা-চারিথ আসালঙ্কা। তবে ৩৮তম ওভারে মিরাজকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করেন ধনাঞ্জয়া। উইকেটের পেছনে মুশফিক প্রথম দফায় বল ধরতে পারেননি। তবে পরের দফায় স্টাম্প ভেঙেছেন, আরও নিশ্চিত হতে স্টাম্প উপড়ে ফেলেছেন। ধানাঞ্জয়া এতটাই দূরে ছিলেন যে, ক্রিজে ফেরার চেষ্টাটুকুও আর করেননি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৪ রান।
২০১৪-তে ক্রিকেট স্পিরিট দেখাননি ম্যাথিউস
রাগে হেলমেট ছুড়ে মারলেন ম্যাথিউস, পেতে পারেন শাস্তি
আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে আসালঙ্কাকে ভালোই সঙ্গ দিচ্ছিলেন মহেশ থিকশানা। সপ্তম উইকেটে বড় জুটির পথেই এগোচ্ছিল তারা। তবে থিকশানাকে ২২ রানে থামালেন শরিফুল। আসালাঙ্কার সঙ্গে তার জুটিতে উঠেছে ৪৮ বলে ৪৫ রান।
এক প্রান্তে ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মধ্যেও আরেক প্রান্তে মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন আসালঙ্কা। তার প্রতিদানও পেয়েছেন। ১০১ বলে পৌঁছেছেন তিন অঙ্কে। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০৫ বলে ১০৮ রান। তিনি ফেরার পর আর বেশি দূর এগোতে পারেনি লঙ্কানরা। ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়েছে তারা।